আগামী নির্বাচনে বিএনপি ৩৯ শতাংশ, জামায়াতে ইসলামী ২১ শতাংশ এবং এনসিপি ১৬ শতাংশ ভোট পাবে বলে মনে করে তরুণরা। ৮২ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণ রাজনীতিতে অংশ নিতে চান না। মাত্র ৩ দশমিক ২ শতাংশ তরুণ রাজনীতিতে অংশ নিতে আগ্রহী। দেশের ৭১ শতাংশেরও বেশি তরুণ মনে করেন, মব জাস্টিস বা গণপিটুনির ঘটনা দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠছে। এটা উদ্বেগজনক।
৯৪ শতাংশ তরুণ মনে করেন শিক্ষা খাতে সংস্কার প্রয়োজন। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। সানেম এবং অ্যাকশনএইড বাংলাদেশে যৌথভাবে এটি পরিচালনা করে। গত ২০ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সারা দেশে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী দুই হাজার তরুণের ওপর এই জরিপ চালানো হয়। সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে ‘ক্রান্তিকালে তারুণ্য: জুলাই আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে চাকরি, শিক্ষা এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, এই গবেষণার ফলাফল শুধু জরিপে অংশগ্রহণকারী নির্দিষ্ট সংখ্যক তরুণের মতামত প্রতিফলিত করে। এটিকে সমগ্র জনগোষ্ঠী বা অন্য কোনো বয়সের মানুষের মত হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। বিশেষ করে রাজনীতির মতো সংবেদনশীল বিষয়ে। সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হানের নেতৃত্বাধীন এই গবেষণা দলে ছিলেন একরামুল হাসান, শাফা তাসনিম, ইশরাত শারমিন, নীলাদ্রি নাভিয়া নোভেলি এবং মো. রাজীব।
জরিপে অংশ নেওয়া তরুণরা মনে করেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি পাবে ৩৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট। ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ ভোট পাবে জামায়াত। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পাবে ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অন্য ধর্মীয় দলগুলো ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ ভোট পাবে। জাতীয় পার্টি পাবে ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং অন্যান্য দল পাবে শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ ভোট। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি পেলে আওয়ামী লীগ পাবে ১৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ ভোট।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে ৪০ শতাংশ, এসএসসি বা এর ওপরে ৬০ শতাংশ। এর মধ্যে শহরের ছিল ৫০ শতাংশ এবং গ্রামের ৫০ শতাংশ। জরিপে অংশগ্রহণকারী পুরুষদের মধ্যে ৪০ শতাংশ বিএনপিকে, ২২ দশমিক ২১ শতাংশ জামায়াতে ইসলামিকে এবং ১৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ এনসিপিকে ভোট দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। অপরদিকে, নারী অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩৭ দশমিক ০৩ শতাংশ বিএনপি, ২০ দশমিক ৫৭ শতাংশ জামায়াত এবং ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ এনসিপিকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।
জরিপ অনুযায়ী, এনসিপির প্রতি নারী ভোটারদের সমর্থন পুরুষ ভোটারদের তুলনায় কিছুটা বেশি। জরিপে আরও দেখা গেছে, বিএনপিকে ভোট দেওয়ার বিষয়ে গ্রামীণ অঞ্চলের ৩৭ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং শহর অঞ্চলের ৩৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ উত্তরদাতা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। জামায়াতের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন গ্রামের ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং শহরে ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এনসিপির ক্ষেত্রে এ হার গ্রামে ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং শহরে ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন গ্রামীণ অঞ্চলের ১৬ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং শহর অঞ্চলের ১৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ ভোটার। অর্থাৎ জরিপ অনুযায়ী, দলটির প্রতি গ্রামীণ ভোটারদের সমর্থন শহরের তুলনায় কিছুটা বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণ মনে করেন মব জাস্টিস বা গণপিটুনির ঘটনা দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের প্রতিফলন হিসেবে মনে করছে তারা। ১৫ দশমিক ১ শতাংশ এ বিষয়ে কোনো মতামত দেননি এবং ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ দ্বিমত পোষণ করেছেন।
শাফা তাসনিম বলেন, ৮০ দশমিক ২ শতাংশ তরুণ অগ্নিসংযোগ, ডাকাতি এবং চুরির মতো ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ মনে করেন, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলছে। তবে ৩৯ দশমিক ৯ শতাংশ তরুণ এর সঙ্গে একমত নন। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৪ দশমিক ২ শতাংশের মতে নারীবাদী বা উদারপন্থী মতামতের বিরুদ্ধে আক্রমণ একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়। অন্যদিকে, ৫৩ দশমিক ৬ শতাংশ মনে করেন, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা তাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণ রাজনৈতিক সংঘর্ষ এবং ক্যাম্পাসের সহিংসতা নিয়ে শঙ্কিত। ৫৬ দশমিক ২ শতাংশ মনে করেন, অন্যায্য বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত গ্রেপ্তার ও মামলা দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করছে। এ ছাড়া ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ সরকারি চাকরির পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন বা বিলম্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
প্রতিবেদেন সানেম বলেছেন, ৮২ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণ রাজনীতিতে অংশ নিতে চায় না। রাজনীতিতে সহিংসতার কারণে ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণ এতে অনাগ্রহী। এ ছাড়া ৫৬ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ মনে করেন রাজনীতিতে দুর্নীতি ও আদর্শের ঘাটতি আছে। মাত্র ৩ দশমিক ২ শতাংশ তরুণ রাজনীতিতে অংশ নিতে চায়। এ ছাড়া প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ তরুণ সরকারি চাকরিতে আগ্রহী। আর ব্যবসায় আগ্রহী ২৬ দশমিক ৪১ শতাংশ। তবে ৪২ দশমিক ৩৪ শতাংশ তরুণ ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে অবগত নন। ৩৯ শতাংশ তরুণ দেশের রাজনীতির খোঁজখবর ও ৪১ দশমিক ৩৯ শতাংশ তরুণ ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের রাজনীতি নিয়ে খোঁজখবর রাখেন। ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ দেশ ও বিদেশের খবর সংগ্রহ করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে। ৪৭ দশমিক ৭ টেলিভিশন ও ১৩ শতাংশ খবর নেন পত্রিকা থেকে। ৫৬ শতাংশ তরুণ মনে করেন সংস্কারের ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশের উন্নতি হবে। তবে মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ সংস্কার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। ৯৪ শতাংশ তরুণ মনে করেন শিক্ষা খাতে সংস্কার প্রয়োজন।